নবজাতক শিশুর সর্দি কাশি হলে করণীয় কি? বিস্তারিত আলোচনা

বিভিন্ন কারণে নবজাতক শিশুদের ঠান্ডাজনিত সর্দি-কাশির সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। আবহাওয়া পরিবর্তনের, ভাইরাস সংক্রমণ, পরিবেশগত পরিবর্তন সহ নানা কারণে শিশুরা ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভোগে। কারো কারো ক্ষেত্রে সর্দি হলে শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়।

সর্দি-কাশির সমস্যা দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থাতে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করতে পারেন। প্রাথমিক অবস্থায় ঘরেই শিশুর বাড়তি যত্ন নিলে এবং কিছু সতর্কতা মেনে চললে বড় কোনো ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমানো যায়।

নবজাতক শিশুর সর্দি কাশি হলে করণীয় কি? বিস্তারিত আলোচনা

এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছি বিস্তারিত আলোচনা করতে যে শিশুর সর্দি-কাশির মতো ঠান্ডাজনিত সমস্যা সম্পর্কে যেমনঃ এটির লক্ষণ কি, কি করবেন, কোন কোন বিষয় গুলা মেনে চললে এমন ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে দূরে থাকা যাবে। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।

নবজাতক শিশুর সর্দি কাশি কারণ:

  1. ভাইরাস সংক্রমণ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সর্দি-কাশি ভাইরাস সংক্রমণের ফলে হয়।
  2. পরিবেশগত পরিবর্তন: তাপমাত্রা পরিবর্তন, ধূলাবালি, ধোঁয়া ইত্যাদি কারণে শিশুর সর্দি-কাশি হতে পারে।
  3. অ্যালার্জি: কিছু শিশু বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জির কারণে সর্দি-কাশি হতে পারে।

প্রথমে, লক্ষণগুলো লক্ষ্য করুন:

  • জ্বর: হালকা জ্বর (১০০.৪°F বা ৩৮°C এর কম) সাধারণ। তবে, যদি জ্বর ১০০.৪°F এর বেশি হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • কাশি: শিশুরা প্রায়শই সর্দি-কাশির সময় কাশি। বুক থেকে আসা শব্দযুক্ত কাশি বা কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • নাক বন্ধ: নাক বন্ধ থাকলে শিশুর শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। লবণাক্ত জলের নাকের ফোঁটা ব্যবহার করে নাক পরিষ্কার করুন।
  • ছিঁকা: ছিঁকা সাধারণত উদ্বেগের কারণ নয়।
  • চোখের জল: চোখের জল থাকলে পরিষ্কার, নরম কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
  • খাওয়াতে অসুবিধা: নাক বন্ধ থাকার কারণে শিশুরা স্তন্যপান বা বোতল থেকে দুধ খাওয়াতে অসুবিধা বোধ করতে পারে। নাক পরিষ্কার করার পর তাদের খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে যেভাবে শিশুর যত্ন নিবেন:

  • প্রচুর তরল পান করুন: বুকের দুধ, ফর্মুলা বা জল দিন। এতে শ্লেষ্মা পাতলা হতে এবং শরীর থেকে তা বেরিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
  • আর্দ্রতা বৃদ্ধি করুন: শুষ্ক বাতাস শ্লেষ্মা ঘন করতে পারে। একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে ঘরের বাতাস আর্দ্র রাখুন।
  • মাথায় ঠান্ডা সেঁক দিন: একটি পরিষ্কার, ভেজা কাপড় দিয়ে শিশুর কপালে ঠান্ডা সেঁক দিন।
  • লবণাক্ত জলের নাকের ফোঁটা ব্যবহার করুন: নাকের পথ পরিষ্কার করতে এবং শ্লেষ্মা পাতলা করতে লবণাক্ত জলের নাকের ফোঁটা ব্যবহার করুন।
  • বুকে তেল মালিশ করুন: বুকে কয়েক ফোঁটা বেবি অয়েল দিয়ে মালিশ করুন। এতে শিশুকে শ্বাস নিতে স্বস্তি পেতে সাহায্য করবে।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন: পর্যাপ্ত বিশ্রাম শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

যেসব সতর্কতা মেনে কোলা উচিত:

  1. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শিশুকে যথেষ্ট বিশ্রাম দিতে হবে যাতে তার শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
  2. বুকের দুধ বা তরল খাবার: শিশুকে পর্যাপ্ত বুকের দুধ বা তরল খাবার দিতে হবে যাতে তার শরীরের পানির অভাব না হয়।
  3. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা:
    • শিশুর হাত এবং মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে।
    • শিশুর আশেপাশের পরিবেশ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
  4. ধূলাবালি এবং ধোঁয়ার থেকে দূরে রাখা: শিশুকে ধূলাবালি এবং ধোঁয়ার পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে হবে কারণ এগুলো শিশুর সর্দি-কাশি আরও বাড়াতে পারে।
  5. হাত ধোয়া: যারা শিশুর সংস্পর্শে আসে তাদের নিয়মিতভাবে হাত ধুতে হবে যাতে জীবাণু সংক্রমণ কম হয়।
  6. শিশুকে গরম পোশাক পরানো: তাপমাত্রা কম থাকলে শিশুকে গরম এবং আরামদায়ক পোশাক পরাতে হবে।
  7. ভিটামিন ও পুষ্টি সরবরাহ: শিশুর খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার রাখা গুরুত্বপূর্ণ যাতে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
  8. ধূমপান থেকে বিরত থাকা: শিশুর আশেপাশে ধূমপান না করা এবং ধূমপায়ীদের থেকেও শিশুকে দূরে রাখা।
  9. জ্বর নিয়ন্ত্রণ: শিশুর জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে তা নিয়ন্ত্রণ করা।
  10. বাষ্প থেরাপি: গরম পানির বাষ্প শিশুর শ্বাস প্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করতে পারে।

যেসব লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন:

  • যদি শিশুর ১০০.৪°F এর বেশি জ্বর থাকে বা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • যদি শিশুর শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়।
  • যদি বুকে শব্দযুক্ত কাশি হয়।
  • যদি শিশু খাওয়াতে বা ঘুমাতে অসুবিধা বোধ করে।
  • যদি শিশুর নাক থেকে সবুজ বা পুঁচিসের মতো শ্লেষ্মা বের হয়।
  • যদি শিশুর কানে ব্যথা হয়।

পরামর্শ:

নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে যেকোনো অসুস্থতাই গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত। তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে আপনার নবজাতক শিশুর জ্বর, সর্দি বা কাশি যায় হোক, উপরোক্ত লক্ষণ গুলার কোনো একটা দেখা দিলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সরণাপন্ন হওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *