কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়: [লক্ষণ, উপসর্গ ও পরামর্শ]
কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্তকে পরিশোধন করে, অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য পদার্থকে শরীর থেকে বের করে দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই কিডনি ভালো আছে কিনা তা বুঝে রাখা খুবই জরুরি।
কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার জন্য বিভিন্ন উপসর্গ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। কিডনি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে:
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
লক্ষণ ও উপসর্গ:
কিডনির সমস্যা থাকলে কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে, প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের কোনো স্পষ্ট লক্ষণ নাও থাকতে পারে, তাই নিয়মিত পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
- মূত্রের পরিমাণ এবং রং:
- মূত্রের পরিমাণে হঠাৎ পরিবর্তন (খুব বেশি বা খুব কম মূত্র)
- প্রস্রাবে রক্ত বা ফোঁটা দেখা দেওয়া, প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি কিডনি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
- শরীরের ফুলে যাওয়া:
- পায়ে, মুখে, বা শরীরের অন্য অংশে ফুলে যাওয়া, যা শরীরে অতিরিক্ত তরল জমার কারণে হতে পারে।
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা:
- শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমার কারণে অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করা।
- শ্বাসকষ্ট:
- শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া।
- খিদে না লাগা এবং বমি বমি ভাব:
- কিডনি সমস্যার ফলে খিদে কমে যাওয়া এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।
- খাবারের স্বাদ অদ্ভুত লাগা।
- ঘুমের সমস্যা:
- কিডনি সঠিকভাবে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করতে না পারলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
- রক্তচাপ বৃদ্ধি:
- কিডনি রোগের কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
- পেশিতে খিঁচুনি:
- ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতার কারণে পেশিতে খিঁচুনি হতে পারে।
- অ্যানিমিয়া:
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়া।
পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই:
কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা করা হয়:
- সিরাম ক্রিয়েটিনিন:
- রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। ক্রিয়েটিনিনের উচ্চ মাত্রা কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়।
- জিএফআর (GFR) পরীক্ষা:
- গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট (GFR) কিডনির ফিল্টারিং ক্ষমতা মাপা হয়। কম জিএফআর কিডনি সমস্যার নির্দেশক।
- মূত্রের পরীক্ষা (Urinalysis):
- মূত্রে প্রোটিন, রক্ত, বা অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের উপস্থিতি যাচাই করা হয়, যা কিডনি সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
- ইউরিন মাইক্রোএলবুমিন টেস্ট:
- মূত্রে মাইক্রোএলবুমিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়, যা কিডনির প্রাথমিক সমস্যা নির্দেশ করে।
- ইমেজিং টেস্ট:
- আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই দ্বারা কিডনির আকার, গঠন, এবং সিস্ট বা টিউমার দেখতে পারে।
যেসব কারণে কিডনি সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়:
- ডায়াবেটিস: দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস থাকলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রক্তনালিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- পরিবারে কিডনি রোগ: পরিবারে যদি কারো কিডনি রোগ থাকে তাহলে আপনারও কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
- মূত্রনালীর সংক্রমণ: দীর্ঘদিন ধরে মূত্রনালীর সংক্রমণ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
নিয়মিত পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ:
- লবণ, ফসফরাস ও পটাসিয়াম কম খাওয়া উচিত।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
- ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন
- কিডনি ভালো আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষ করে যদি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে।
- চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত রক্তচাপ এবং রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা কিডনির সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা কিডনি ভালো রাখতে এবং সম্ভাব্য সমস্যাগুলো দ্রুত শনাক্ত করতে সহায়ক।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন:
- যদি আপনার উপরে উল্লেখিত কোন লক্ষণ দেখা দেয়।
- যদি আপনার পরিবারে কারো কিডনি রোগ থাকে।
- যদি আপনার ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে।
মনে রাখবেন: কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোন লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। তাই নিয়মিত চেকআপ করা খুবই জরুরি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই তথ্য শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং এটি কোনো ধরনের চিকিৎসা পরামর্শ হিসাবে বিবেচিত হবে না। কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
Source:
- https://en.wikipedia.org/wiki/Kidney_disease
- https://www.bbc.com/bengali/news-60693386